রুবিক্স কবিতা - অনিন্দ্য রায়



রুবিক্স কবিতা

রুবিক্স কিউব। হ্যাঁ, সেই খেলনাটি। একটি কিঊব, ঘনক, যার ছটি তল, আর প্রতিটি তলে নটি করে স্কোয়ার।, সব মিলিয়ে ৬ × ৯= ৫৪টি। স্কোয়ারগুলি রং-করা, ছ রকম রঙের । ধরা যাক, লাল, সবুজ, নীল, হলুদ, কমলা আর সাদা। প্রতিটি রঙের নটি করে স্কোয়ার। তিনটে রো আর তিনটে কলমে, শুরুতে স্কোয়ারগুলি এলোমেলো করে নেওয়া হয়। কোনো একটা দিকে হয়তো তিনটে লাল, দুটো করে সবুজ ও নীল, একটা করে কমলা ও সাদা। এইরকম, এলোমেলো। ও, হ্যাঁ, স্কোয়ারদের ঘোরানো যায় । এই ঘোরানোটাই খেলা। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একদিকে একেক রঙের স্কোয়ারগুলিকে নিতে আসতে হবে, এটাই খেলা। একা একা একটা দিকে নটা লাল, অন্য একটা দিকে নটা সবুজ,অন্য একটা দিকে নটা নীল, এইভাবে, ছটা তলে ঠিক ঠিক স্কোয়ার বসিয়ে ফেলতে পারলেই খেলা শেষ, রুবিক্স কিউব সলভড।
১৯৭৪ সালে হাঙ্গেরিয়ান স্থপতি ও ভাস্কর এরনো রুবিক কিউব আবিষ্কার করেন। প্রথমে এর নাম ছিল ম্যাজিক কিউব। এটা হল কম্বিনিশন পাজল, একধরণের ধাঁধা। কিউবের মাঝে একটা পিভট থাকে, এই পিভটের সাহায্যেই স্কোয়ারদের ঘোরানো যায়। আবিষ্কারের সাথে সাথেই এটির প্রতি আকর্ষণ বাড়তে থাকে। রুবিক এটির লাইসেন্স নেন এবং খেলনা হিসেবে বাজারে আনেন। ব্যস, এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে দ্রুত। একটি কঠিনতর ধাঁধা হিসেবে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সমাধান না হওয়ার মিথ যুক্ত হয় এর সাথে। যদিও এর সমাধান হয়েছে প্রথমেই আর তার কৌশল-নির্দেশিকা ছাপা হয়ে চলে এসেছে বাজারে। পৃথিবীতে প্যাজল-টয়ের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত এই রুবিক্স কিউব।
রুবিক্স কিউব ঘোরাতে ঘোরাতে, প্রত্যেক টার্নে, নতুন নতুন রঙের প্যাটার্ন তৈরি হয়। একটা দিকে যা ছিল তিনটে লাল, দুটো করে সবুজ ও নীল, একটা করে কমলা ও সাদা, একবার ঘোরানোর পর হয়তো দুটো লাল, তিনটে করে সবুজ ও নীল আর একটা হলুদ। এইভাবে কম্বিনেশনের পর কম্বিনেশন,প্যাটার্নের পর প্যাটার্ন , সম্ভাবনার পর সম্ভাবনা। একটা ৩×৩×৩ রুবিক্স কিউব এইভাবে ঘুরিয়ে ৫১৯০২৪০৩৯২৯৩৮৭৮২৭২০০০ রকমের রঙের প্যাটার্ন পাওয়া সম্ভব।
তার মানে একটা কবিতা থেকে ৫১৯০২৪০৩৯২৯৩৮৭৮২৭১৯৯গুলি কবিতা পাঠকের। এবং শেষে মেলাতে মেলাতে কবির কবিতাটিকে পেয়ে যাওয়া ৫১৯০২৪০৩৯২৯৩৮৭৮২৭২০০০তম রঙের প্যাটার্ন।
এখন রুবিক্স কিউব পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরণের। কোনোটায় একেক তলে ৪টে করে রো ও কলামের ১৬টা স্কোয়ার (৪×৪×৪), কোনোটায় ৫টআ করে ২৫টা স্কোয়ার (৫×৫×৫), এইভাবে ১৫×১৫×১৫ বা আরো বেশি। আবার ২×২×২।
কোনো কোনোটায় স্কোয়ারগুলি আবার সমান নয়। এইসবে প্যাটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনাও বদলে যায়। স্কোয়ার বাড়লে বাড়তে থাকে।
….
তো, রুবিক্স কিউব কবিতা ।
কবিতা ৬ লাইনের, প্রতি লাইনে ৯ টি করে শব্দ ( শব্দগুলি প্রতিটি অক্ষরবৃত্তে ৪ মাত্রার, এতে বর্গাকার ধারণাটি আসবে। )
প্রতিটি শব্দ এমন, মাইনগুলি এমন যে, শব্দগুলি ইন্টারচেঞ্জ করা যায়, রুবিক্সকিউবের মতো শব্দগুলিকে ঘোরানো যায়। প্রথম লাইনের তৃতীয় শব্দটির বদলে, চতুর্থ লাইনের সপ্তম শব্দও বসানো যায়, তাতে প্রথম লাইনটির নতুন অর্থ তৈরি হবে। এইভাবে যেকোনো শব্দই ওই কবিতাটির অন্য শব্দ দিয়ে রিপ্লেস করা যেতে পারে।
রুবিক্স কিউবের যেকোনো ১টি তলের সাথে যুক্ত থাকে ৪টি তল, ১টি তল থাকে উল্টোদিকে। সেইভাবে কবিতার যেকোনো ১টী লাইনের সাথে সম্পর্ক থাকবে অন্য ৪টি লাইনের, ১টি লাইন হবে বিপরীত।।
এইটা চ্যালেঞ্জ
১) ৬ লাইনের কবিতা।
২)প্রতি লাইনে ৯টি করে শব্দ ।
৩) প্রতিটি শব্দ ৪ অক্ষরের । প্রয়োজনে অন্য মাত্রাকাঠামোও ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু সব শব্দই ( ৫৪টি ) যেন সমান মাত্রার হয় ।
এবং কোনো শব্দ রিপিট হবে না ।
৪)কবিতাটি যেভাবে লেখা হয়েছে তার অর্থ থাকবে, আবার শব্দগুলির ইন্টারচেঞ্জ করেও নতুন নতুন অর্থ থাকবে।
৫) যেকোনো একটি লাইন ৪টি লাইনের সাথে সম্পর্কযুক্ত হবে, একটি লাইনের সাথে হবে না।
প্রথম ৩টি পয়েন্ট ব্যবহার করে লেখা শুরু করা যেতে পারে। ৪ ও ৫ নম্বর পয়েন্ট অনুশীলন্সাপেক্ষ ।

রুবিক্স কবিতা - অনিন্দ্য রায় রুবিক্স কবিতা - অনিন্দ্য রায় Reviewed by Unknown on December 19, 2017 Rating: 5

No comments