মহাদেবাশার শূন্যতত্ত্ব (প্রথম পর্ব)
শূন্যতত্ত্বের প্রথম কিস্তি:
জিরোওয়াটের বা শূন্যতত্ত্বের প্রয়োজনীয়তার কারনের
পিছনে লুকিয়ে আছে আমার সত্যের প্রতি ঝোঁক।কোন সত্যের প্রতি ঝোঁক?
প্রকৃত সত্যের প্রতি । কী
সেই প্রকৃত সত্য?তার
উদঘাটনটা ঘটেছিল আরও কিছু প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে।যতটা পারা যায় প্রকৃত
সত্যের অন্বেষণ করা।
হ্যাঁ এই জায়গা থেকেই আমি নিজেকে একজন সত্যান্বেষী
বলেই মনে করি।'অসদ মা সদগময়।
তমসো মা জ্যোতির্গময়।
মৃত্যোর্মা অমৃতং গময়।'
অসদ অর্থাৎ যা নেই সেখান থেকে সৃষ্টি হচ্ছে
অর্থাৎ সদ বস্তু তারপর তমসো অর্থাৎ অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাচ্ছে তার মানে এই দাঁড়াচ্ছে পৃথিবীর মানুষের বা বলতে গেলে প্রত্যেক জীবের কর্মকান্ডকে বোঝাচ্ছে। তারপর
আবার আমরা ফিরে যাচ্ছি সেই অসদ-এ অর্থাৎ
যা নেই তাতে। পৃথিবীর এই রহস্য উন্মোচনের মাধ্যমেই আমরা পৌঁছে যাব প্রকৃত সত্যের কাছে।
যা নেই তাই কি শূন্য,আচ্ছা শূন্য ব্যাপারটা আসলে কী? 'শূন্য কিছু নয়' এমন এক ভাবনার
মাধ্যমে শূন্যকে চিনতে শিখলেও, শূন্য সত্যিই কি তাই?
একজন ছেলে পরীক্ষা দিয়ে একটি বিষয়ে শূন্য পেয়েছে অন্য একজন ছেলে এই বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারে নি।তাহলে আমরা দ্বিতীয় ছেলেটির ক্ষেত্রে বলতে পারি না ছেলেটি ঐ বিষয়ে শূন্য পেয়েছে। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে 'শূন্য কিছু নয়' এই ভাবনার মাধ্যমে যতই আমরা একে অর্থাৎ শূন্যকে চিনতে শিখি না কেন কিন্তু শূন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।মানুষের চিন্তাধারার স্রোতপথে এক অনিবার্য, জরুরি এবং অভীস্পিত বিমূর্ত উত্তরণ। শূন্যকে ভালোভাবে চেনার পর ধীরে ধীরে আমরা এক উচ্চ সৃজনশীল ক্ষমতা এবং একক অনন্য ভূমিকাকে অনুধাবন করতে সক্ষম হই। শূন্যের শক্তিশালী অথচ রহস্যময় চরিত্রে আমরা সম্মোহিত হই। সত্যি, শূন্যের এক এবং অদ্বিতীয় ভূমিকা আমাদের রোমাঞ্চিত করে।
ভাস্করচার্য তার 'বীজগণিত' গ্রন্থে শূন্য বিষয়ে এক বিশেষ অধ্যায় রেখেছেন, যেখানে তিনি শূন্য সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা করেছেন।শূন্য দিয়ে ভাগ করাকে তিনি অসংজ্ঞাত না বলে খহর বলেছেন অর্থাৎ শূন্য দিয়ে কোনো সংখ্যাকে ভাগ করলে যে ফল আমরা পাবো তাকে তিনি 'খহর' বলেছেন। 'খ' অর্থাৎ শূন্য যার হর তা হল খহর। তিনি 'খহর' কে অসীমের সঙ্গে একাত্ম করে দিয়েছেন।তিনি বিষয়টিকে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন এক শ্লোকের মধ্যে। শ্লোকটির বাংলা অনুবাদ হল, "জগৎ সৃষ্টির সময় যখন অসীম ও অবিনশ্বর মহান সর্বশক্তিমান থেকে কোটি কোটি প্রাণীর সৃষ্টি হয় এবং মহাপ্রলয়ের সময় যখন এইসব প্রাণী তাঁর দেহে প্রবেশ করে এবং লীন হয়, তখন কোনো সময়ই তাঁর কোনো ক্ষয় বা বৃদ্ধি হয় না। ঠিক তেমন খহর অর্থাৎ শূন্যের সঙ্গে কিছু যোগ করলে বা বিয়োগ করলে তার কোনো পরিবর্তন হয় না।"
ভারতীয় সাহিত্যেও পাওয়া যায় শূন্যর ব্যবহার। যেমন ষষ্ঠ শতাব্দীর কবি সুবন্ধুর বাসবদত্তাতে শূন্যকে শূন্যবিন্দু বলেছেন। শ্রীহর্ষের নৈষদচরিতেও তাই বলা হয়েছে। রামায়ণে শূন্যকে বিন্দু বলা হয়েছে। কাশ্মীরীয় অর্থব বেদেও এ ধরনের উল্লেখ পাওয়া যায়।কিন্তু আমরা চর্যাপদেই প্রথম শূন্যতত্ত্বকে ব্যাপকভাবে কবিতায় পাই যদিও সেটা ভাবগত শূন্য।
আমি কোনো বুদ্ধিজীবী নই।এই প্রবন্ধ বা গদ্য বা দর্শন বা কিছুই নয় লেখার পর কেউ যদি আমাকে বুদ্ধিজীবী আখ্যা দেন তা কিন্তু প্রকৃত সত্য হবে না। আবার একে মিথ্যে ভাবারও কিছু নেই আসলে মিথ্যে বলতে প্রকৃত সত্যের থেকে কম সত্য বলেই বুঝি বা মেনে চলি।এই আত্মপক্ষের সমর্থন করে রাখাটা আমার কাছে খুবই প্রয়োজন নইলে নৈর্ব্যক্তিক হয়ে ওঠা আমার পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে উঠতে পারে। নিজেই নিজের বন্ধনে জড়িয়ে পরতে পারি।তাহলেই কিন্তু আমি তখন একজন বুদ্ধিজীবির তমাকা পেয়ে যাব নিজের কাছে। আমি কিন্তু প্রকৃত সত্যের সন্ধানে বেরিয়েছি এটা যেন কখনও না ভুলি। আমার এই 'কিছু নয়' আলফালের চিন্তাটা আমার দীর্ঘদিনের যাপনের ফল।
এর শুরুতেই আরও কিছু বলার প্রয়োজন বলেই দ্বিতীয়টা আগে বলে নিলাম।গোড়ায় জল না দিয়ে গাছের পাতায় জল দিয়ে কী লাভ হয় তা খুবই ভালো করেই জেনেছি সুতরাং ঐখানে নৈব নৈব চঃ।এই কিছু নয় বা শূন্যতত্ত্বের চিন্তাটা শুরু করেছিলাম এভাবে যে দ্বিতীয়টা আগে বলে দাও তারপর প্রথমটা খোঁজো। মূল ভাবনাটা এই একই সুরে বাঁধা।
মহাদেবাশার শূন্যতত্ত্ব (প্রথম পর্ব)
Reviewed by Unknown
on
October 22, 2017
Rating:
সমৃদ্ধ হলাম দাদা এবং অপেক্ষায় রইলাম দ্বিতীয় থেকে প্রথমের|
ReplyDeleteভালোলাগলো মহাদেব, পরবর্তীর অপেক্ষায় রইলাম।
ReplyDeleteশূন্য মানে ফাঁকা নয়, শূন্য থেকে কিছু/সমস্ত কিছুর সৃষ্টি হয়/সম্ভব এবং সমস্ত কিছুই বিলীন হয় শূন্যর অসীম গহ্বরে। অর্থাৎ শূন্যর ব্যপ্তি আসলে অসীম। জিরো = ইনিফিনিটি। ভারতীয় দর্শনের এই অন্যতম মূল তত্ত্বকে তুমি কিভাবে কবিতায় ব্যবহার করবে, তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
দারুন লাগলো,, পরের অপেক্ষায় রইলাম
ReplyDelete